কুমিল্লায় ২৯ টি চোরাই গাড়িসহ গাড়িচোর চক্রের ১৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর সদস্যরা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সদর ও বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোরাই গাড়িসহ তাদের আটক করে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২, কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লাসহ সারাদেশে গাড়ি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন, অর্থ দাবী, মারাতœকভাবে আহতসহ বিভিন্ন মর্মান্তিক ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। বিগত কয়েক মাসে অসংখ্য গাড়ি চুরির অভিযোগ র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কাছে জমা হয়েছে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরী ও লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১১, সিপিসি-২ মাঠ পর্যায়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লা সদরের পালপাড়া এলাকার খলিলের গ্যারেজে একটি চোরাই গাড়ি রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা কাটার মেশিন দিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান কেটে যন্ত্রপাতি আলাদা করার সময় চক্রের মূলহোতা খলিলসহ ৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন কুমিল্লা সদরের আড়াইওড়া গ্রামের মৃত. মনোহর আলীর ছেলে কাউসার আলী খলিল (৪৫), একই গ্রামের ওহাব কাজীর ছেলে মোঃ কাইয়ুম (৪২), মোঃ মুক্তার হোসেন মুসার ছেলে মোঃ সাজিদ হোসেন (২০), সদরের বাটপাড়া গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে নাজমুল হোসাইন রবিউল (১৯), হাড়ং গ্রামের মোঃ আলম মিয়ার ছেলে মোঃ আবু কাউসার (৩৫), বদরপুর গ্রামের মোঃ হোসেনের ছেলে মোঃ পিয়াস (৩৩), আড়াইওড়া গ্রামের মৃত. দিদার বক্স এর ছেলে মোঃ জহির মিয়া (৪০) এবং মধ্যম মাঝিগাছা গ্রামের মোঃ হান্নান মিয়ার ছেলে মোঃ জামশেদ হোসেন (২১)।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দেবিদ্বারের বাগুড় গ্রামের লতিফ সরকারের ছেলে আলীম সরকারের একটি কাভার্ড ভ্যান চুরি হয়। র্যাব ৮ জনের কাছ থেকে যেই কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধার করেন, সেটিই চুরি হওয়া সেই কাভার্ড ভ্যান। এছাড়া চোর চক্রের স্বীকারোক্তিতে গাড়ি চুরির সাথে সম্পৃক্ত আরেকটি সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন সদস্যের তথ্য পাওয়া যায়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতেই সদরের চম্পকনগর, বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা (দক্ষিণ) ও পশ্চিম সিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চক্রের মূলহোতা জাহাঙ্গীরসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার নবীয়াবাদ গ্রামের মৃত. সামসুল আলমের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গীর (৪৫), সদরের শিমরা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে হৃদয় হাসান (১৯), বুড়িচং উপজেলার কংশনগর গ্রামের ধনু মিয়ার ছেলে শুক্কুর আলী (২৩), বুড়িচং উপজেলার পারোয়ারা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে রিপন মিয়া (২৬), আব্দুল আলীম (২৭), চান্দিনার শ্রীমন্তপুর গ্রামের মোঃ মোহর আলীর ছেলে মোঃ সাইফুল (৩২), ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শাহেরাবাদ গ্রামের মইনুল হোসেনের ছেলে মোঃ আল আমিন (২৪), সদরের শাসনগাছা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মনির মিয়া (৩৯), সদরের আড়াইওড়া গ্রামের কাজী মঞ্জিলের ছেলে মজিদ (৩০), বুড়িচংয়ের পাঝয়ারা গ্রামের ধনু মিয়ার ছেলে মোঃ তাজুল ইসলাম (৩২) এবং বুড়িচংয়ের পশ্চিম সিংহ গ্রামের শাহজাহানের ছেলে মোঃ ওমর ফারুক (২৮)। গ্রেফতারকালে উক্ত চক্রের সদস্যদের কাছ হতে ১ টি কাভার্ড ভ্যান, ২ টি মোটরসাইকেল ও ২৬ টি ব্যাটারীচালিত গাড়িসহ অসংখ্য যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা র্যাবকে জানায়, মূলত ৩ টি গ্রুপের সমন্বয়ে তারা গাড়ি চুরি ও নতুন করে বাজারজাত করে। ১ম গ্রুপ গ্রেফতারকৃত আসামী সাজিদ, জামশেদ, নাজমুল, মজিদ, ফারুক ও পলাতক আসামী মনির, সেলিম, সোহেল, কামাল) যাত্রীবেশে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে গাড়িগুলোকে টার্গেট করে এবং সুযোগ বুঝে ড্রাইভারকে জিম্মি করে বা ড্রাইভারের অনুপস্থিতে সেগুলো চুরি করে। এছাড়াও চুরিকৃত গাড়িগুলো যেন সহজে কেউ খুঁজে না পায় সেজন্য তারা এক এলাকা হতে গাড়িগুলো অন্য এলাকায় নিয়ে যায়। ২য় গ্রুপের কাইয়ুম, পিয়াস, জহির, শুক্কুর ও পলাতক আসামী শফিক, জহিরুল, জালাল, জামাল, নজির এদের কাজ হলো চুরিকৃত গাড়িগুলো বিক্রির জন্য যে এলাকা থেকে গাড়িগুলো চুরি হয়েছে ঐ এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকার গ্যারেজ মালিকদের নিকট গাড়িগুলো বিক্রি করা এবং তাদের নিকট পৌছে দেওয়া ৩য় গ্রুপের সদস্য খলিল, তাজুল, মনির, সাইফুল, জাহাঙ্গীর গাড়িগুলো স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে তাদের নিজস্ব গ্যারেজে নিয়ে অতি দ্রুত গাড়িগুলোর ব্যাটারী ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ খুলে রং পরিবর্তন করে কয়েকটি গাড়ির যন্ত্রাংশ একত্রিত করার মাধ্যমে নতুন গাড়িতে পরিণত করে এবং নতুন গাড়ি হিসেবে গ্রাহকের নিকট বিক্রি করে।
নতুন গাড়িটির সাথে চুরি হয়ে যাওয়া গাড়িটির কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না বলে এই চক্রের সদস্যরা নির্ভয়ে এই কাজ পরিচালনা করে আসছে।
আসামীদের স্বীকারোক্তি মতে আরো জানা যায়, তারা প্রায় ১০ বছর যাবৎ এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। মূলত ৩য় গ্রুপ ২য় গ্রুপের মাধ্যমে চুরিকৃত গাড়িগুলো প্রায় ৩০-৫০ হাজার টাকা মূল্যে ১ম গ্রুপের নিকট থেকে ক্রয় করে এবং ২য় গ্রুপের সদস্যদেরকে প্রতিটি গাড়ি বাবদ ৫-১০ হাজার টাকার সম্মানী পায়। ৩য় গ্রুপ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরাতন গাড়িকে নতুন গাড়িতে পরিণত করে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকায় গ্রাহকের নিকট বিক্রি করে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী ও বুড়িচং থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।